বাংলায় চৈতন্যচরিত সাহিত্যের প্রথম লেখক বৃন্দাবন দাস ।বর্ধমান জেলার দেড় গ্রামে বৃন্দাবন দাসের নিবাস ।আনুমানিক ১৫১৯ খ্রিস্টাব্দের.............
বাংলায় চৈতন্যচরিত সাহিত্যের প্রথম লেখক বৃন্দাবন দাস এবং চৈতন্য ভাগবত প্রশ্ন উত্তর
Brindavan Das and Chaitanya Bhagwat, the first writers of Chaitanyacharita literature in Bengali Question Answers
বৃন্দাবন দাস
বাংলায় চৈতন্যচরিত সাহিত্যের প্রথম লেখক বৃন্দাবন দাস ।বর্ধমান জেলার দেড় গ্রামে বৃন্দাবন দাসের নিবাস ।আনুমানিক ১৫১৯ খ্রিস্টাব্দের মাঝামাঝি সময়ে বৃন্দাবন দাস জন্মগ্রহণ করেন । নারায়ণী দেবী (শ্রীবাসের ভ্রাতুষ্পুত্রী)বৃন্দাবন দাসের মাতা । ১৫৪৮ খ্রিস্টাব্দে রচিত বৃন্দাবন দাসের কাব্যে 'চৈতন্যভাগবত' ।'চৈতন্যভাগবত' তিনটি খণ্ডে বিভক্ত ছিল, যে গুলি ছিল- (ক) আদি খণ্ড—১৫ টি অধ্যায়ে চৈতন্য জন্ম থেকে গয়া প্রত্যাবর্তনে সমাপ্ত ।। (খ) মধ্যখণ্ড—২৭টি অধ্যায়ে চৈতন্যের সন্ন্যাস গ্রহণে সমাপ্তি। (গ) অন্ত খণ্ড—১০টি অধ্যায়ে গৌড়ীয় ভক্তদের সঙ্গে মিল ও মহোৎসবে সমাপ্তি।চৈতন্যভাগবতের মোট ছত্র সংখ্যা কত ৪৫ হাজার। সুর ও তালে আবৃত্তি ও গানের জন্য রাগরাগিনীর উল্লেখ আছে এই গ্রন্থে।
বৃন্দাবন দাসের 'চৈতন্যভাগবত'-এর আসল নাম ছিল চৈতন্যমঙ্গল '। বৃন্দাবন দাস মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্যদেবকে শ্রীকৃষ্মের অবতাররূপে দেখেছিলেন এই কাব্যে ।বৈশ্বৰ ভক্তগণ বৃন্দাবন দাসকে চৈতন্যলীলার ব্যাস' আখ্যায় ভূষিত করেন।'চৈতন্যভাগবত' নামটি দিয়ে ছিলেন বৃন্দাবনের গোস্বামীরা । ভাগবতের অনুসরণে লেখা বলে বৃন্দাবনের গোস্বামীরা এই নামকরণ করেন।তবে অন্য মতাবলম্বীরা 'চৈতন্যভাগবত'-এর নামকরণের ক্ষেত্রে যুক্তি দেখান যে- লোচন দাসের কাব্যের নাম 'চৈতন্যমঙ্গল' থাকায় কবি বৃন্দাবন দাস মায়ের নির্দেশে গ্রন্থের নামকরণ করেন 'চৈতন্যভাগবত'।
নিত্যানন্দের শিষ্য ছিলেন তিনি। ‘চৈতন্যভাগবত'-এ চৈতন্যদেব ও নিত্যানন্দকে বৃন্দাবন দাস কৃষ্ণ ও বলরামের অবতাররূপে চিত্রিত করেছেন। বৃন্দাবন দাস চৈতন্যলীলার প্রত্যক্ষ স্রষ্টা নন। তাঁর কাব্যের উৎস সমকালীন রচিত গ্রন্থাদি ও চৈতন্য পার্ষদ কথিত কাহিনি। কবি মহাপ্রভুর জীবনকে এক বিশেষ আধ্যাত্মিক দৃষ্টিকোণ থেকে তাৎপর্যমণ্ডিত করে তুলেছেন।
'বৃন্দাবন দাসের 'চৈতন্যভাগবত' সমাজচেতনার জাজ্বল্যমান দৃষ্টান্তসংক্ষেপে লেখো।
'চৈতন্যভাগবত' বাংলার সামাজিক, রাষ্ট্রনৈতিক, অর্থনৈতিক ও লৌকিক ইতিহাসের আলেখ্য চিত্র। নবদ্বীপের সমৃদ্ধি, বিদ্যাচর্চা, অন্ধসংস্কার, লোকাচার, ধর্মাচার, আমোদ-প্রমোদ, হিন্দু-মুসলমান সম্পর্ক, অবৈশ্বব সম্প্রদায়ের বৈশ্বব বিরোধিতা ইত্যাদির উল্লেখে তিনি সমকালীন বাংলার বিচ্ছিন্ন অথচ নিখুঁত চিত্র অঙ্কন করেছেন।
'চৈতন্যভাগবত' গ্রন্থটির মূল সুর কী ?
'চৈতন্যভাগবত' গ্রন্থটিকে শেষ পর্যন্ত ঐতিহাসিকতা ও মানবিকতার ঊর্ধ্বে বৃন্দাবন দাস ভাগবতী মাহাত্ম্যে উন্নীত করেছেন। চৈতন্যদেব ও নিত্যানন্দ, কৃষ্ম ও বলরামের অবতাররূপেই চিত্রিত। চৈতন্যভাগবতে সর্বত্র শ্রীচৈতন্যের ভুবনমনমোহিনী রূপমাধুরী উজ্জ্বলিত। প্রগাঢ় ভক্তিভাবুকতা বাঅধ্যাত্মবিশ্বাসের সঙ্গে সহজ কবিত্ব গ্রন্থটিকে পরম আস্বাদের বস্তু করে তুলেছে।
বৃন্দাবন দাসের কাব্যে (ক) চৈতন্যহৃদয়গ্রাহী মানুষ। (খ) সমকালীন পরিবেশ রাজনীতির ছবি আছে। (গ) ঐতিহাসিক নিষ্ঠা লক্ষণীয়। এবং চৈতন্যভাগবতের ত্রুটি নিয়ে যদি আলোচনা করতে হয় তবে বলতে হবে-(ক) অসমাপ্ত চৈতন্যজীবনী। (খ) অলৌকিকতার নাগপাশে বন্ধ। (গ) কবির অসহিষ্ণু মনোভাবে কবির বৈশ্বব বিদ্বেষ প্রতিফলিত।
'চৈতন্যভাগবত' চৈতন্যলীলার বৈশিষ্ট্য কী ?
বৃন্দাবন দাস চৈতন্যের বালা থেকে যৌবন পর্যন্ত ঘটনাকে ভাগবতের আদর্শে সাজিয়েছিলেন। তিনি চৈতন্যদেবকে কৃষ্ণ বলে বিশ্বাস করতেন। তাই বাস্তবজীবনের কিছুকিছু ঘটনাকে বদলেছেন।বৃন্দাবন দাসের গুরু নিত্যানন্দের নির্দেশ ও উপদেশ অনুযায়ী বৃন্দাবন দাস চৈতন্যভাগবত' চৈতন্যলীলা গ্রন্থ রচনা করেন।১৫৭৩ খ্রিস্টাব্দে কবি কর্ণপুর নামে এক চৈতন্য ভক্ত 'গৌরগণোদ্দেশদীপিকা' নামক বই লেখেন। কবি কর্ণপুরের আসল নাম পরমানন্দ সেন। তিনিই প্রথম উল্লিখিত বইতে বৃন্দাবন দাসের 'চৈতন্যভাগবত'-এর কথা বলেছিলেন।বৃন্দাবন দাসের প্রধানতম কৃতিত্ব হল চৈতন্যের একটি ব্যক্তিমহিমার ভাব ফুটিয়ে তোলা। ভক্তি প্রবলতা, অলৌকিকে বিশ্বাস প্রভৃতির মধ্য দিয়েও চৈতন্যের সেই মানবরূপ জীবন্ত হয়ে উঠেছে।
পাপ বিনাশ করে পুণ্যের প্রতিষ্ঠার জন্য ভগবান কৃষ্ণ অবতীর্ণ হয়েছিলেন দ্বাপরে। চৈতন্য কলিতে পূর্ণাবতার। এই দৃষ্টিতে বৃন্দাবন দাস জীবনী লিখেছেন। তবে প্রত্যক্ষদর্শীর কাছ থেকে তথ্য সংকলিত হওয়ায় তা অনেকটা নির্ভরযোগ্য এবং দেশকালের বিবরণ সনিষ্ঠায় পরিবেশিত।তথ্যনিষ্ঠ বর্ণনা, বিশ্বাসনিষ্ঠ আন্তরিকতা, ইতিহাসের তথ্যে, ভক্ত হৃদয়জাত বিশ্বাস-সত্যে এবং শৈল্পিক সরসতায় চৈতন্যভাগবত' যথার্থই বৈষ্ণবধর্মের 'ভাগবত' হয়ে উঠেছে। যথার্থই 'চৈতন্যলীলার ব্যাস বৃন্দাবন দাস। (চৈতন্যচরিতামৃত')।
COMMENTS